প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ইউরোপীয় দেশগুলো তাণ্ডব চালালেও আশ্চর্যজনকভাবে এতোদিন জার্মানিতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল তুলনামূলক অনেক কম। এ নিয়ে বিশ্বের অনেকেরই বেশ কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছিল। অনেকে এ জন্য জার্মানির চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা বলে দাবি করেছিলেন। তবে এবার সেই সাফল্যের বেলুন ফুটো হয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে রেকর্ড ১২৮ জনের মৃত্যু ঘটেছে। আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪ হাজার ৬১৫ জন। এই নিয়ে দেশটিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫০ জনে। আক্রান্ত হয়েছে ৬৭ হাজার ৫১ জন।
রবার্ট কচ ইনস্টিটিউট কর্তৃক ঘোষিত পরিসংখ্যানে শতাধিক নতুন মৃত্যুর এই খবর উঠে এসেছে। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর হার ২৮ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই মৃত্যুর পরও জার্মানির সার্বিক মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ, যা ইউরোপীয় প্রতিবেশীদের তুলনায় অনেক কম। তবে এক সপ্তাহ আগের তুলনায় এই হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
করোনার মৃত্যুপুরী ইতালির নিকটতম রাজ্যগুলিতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়েছে। দক্ষিণের রাজ্য বাভারিয়া এবং বাডেন-উয়ের্তেমবার্গে ৩২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
পশ্চিম রাজ্য উত্তর রাইন-ওয়েস্টফালিয়া,হামবুর্গ এবং বার্লিনের মতো জনবহুল শহরগুলিতেও বেশ কিছু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। রাজধানী বার্লিনে ২ হাজার ৩০০ এরও বেশি মানুষ সংক্রামিত হয়েছে, যার মধ্যে ১৩ জন মারা গেছে।
জার্মান সংবাদমাধ্যমে তথ্য অনুসারে, নিহতদের মধ্যে ওল্ফসবার্গের একটি অবসর হোমের ১৭ জন লোকও রয়েছেন। কেয়ার হোমের প্রায় অর্ধেক বাসিন্দা এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে, যা বয়স্কদের পক্ষে আরও বিপজ্জনক।
গত ২১ মার্চ থেকে জার্মানির বায়ার্ন মিউনিখ, সারল্যান্ড সহ বিভিন্ন প্রদেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হলে দুই বছরের জেল বা পঁচিশ হাজার ইউরো (২৫ লাখ টাকার বেশি) জরিমানার বিধান করা হয়েছে।
সরকারি এই নিষেধাজ্ঞার কারণে কেউ বাইরে বের হলে পুলিশ অথবা দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট যথাযথ কারণ সাপেক্ষে প্রমাণ পেশ করতে হচ্ছে। তা না করলে সঙ্গে সঙ্গে জরিমানা করা হচ্ছে আইন অমান্যকারীদের।
এর আগে, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশটির সীমান্ত এবং সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও সরকারি নির্দেশনা অনুযায় দেশটির মসজিদ, গির্জা ও মন্দিরসহ সব ধরনের উপাসনালয় বন্ধ রাখা হয়েছে।
গত সপ্তাহে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল এক টেলিভিশন ভাষণে বলেছিলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি এত বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আর কখনো হয়নি। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সবাইকে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।